দীর্ঘদিন ধরে গাজা যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ ও জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভের মুখে চাপে আছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সেইসঙ্গে রয়েছে বিরোধীদলের চাপও। এবার যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দখলদার এই ইসরায়েলী প্রধানমন্ত্রীর সরকার ভেঙে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছে। বুধবার (১১ জুন) ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে সরকার ভেঙে দেওয়ার প্রাথমিক ভোটাভুটি হতে পারে। এই ভোটে নেতানিয়াহু হেরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে করে দেশটিতে আগাম নির্বাচন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
রয়টার্সর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহুর জোটে থাকা দলই তার সরকার পতনের পথ ত্বরান্বিত করছে। এই জোটের কিছু ইহুদি ধর্মপন্থি দল ‘অতি-গোঁড়া ইহুদি শিক্ষার্থীদের’ সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক কাজ করার ব্যাপারে ‘ছাড়’ চাইছে। কারণ, দেশটিতে এটি আইন পরিপন্থি। অপরদিকে নেসেটের কিছু আইনপ্রণেতা ছাড়ের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে বিলোপ চাইছে।
অতি-গোঁড়া ইহুদি শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক সামরিক দায়িত্ব পালন করা বা না করার বিষয়টি নিয়ে ইসরায়েলে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। তবে সম্প্রতি দখলদাররা গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর আরও সেনা ডাকছে। এরমধ্যে ডাক পাচ্ছে অতি-গোঁড়া ইহুদিরাও। এরপর থেকে বিষয়টি ইসরায়েলে অনেক বেশি আলোচিত হচ্ছে।
এই পরিস্থিতে দেশটিতে অতি-গোঁড়া ইহুদিদের সামরিক বাহিনীতে কাজ করা সংক্রান্ত আইন নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। নেতানিয়াহু অবশ্য পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু সমাধান না হওয়ায় এখন ইসরায়েলের ধর্মভিত্তিক দলগুলো তার সরকার পতনের পথে হাঁটছে। ধর্মীয় গোঁড়া দলগুলো বলেছে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে যোগ দিয়ে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পক্ষে ভোট দেবেন তারা। এমনটি হলে ইসরায়েলে অনুষ্ঠিত হবে আগাম নির্বাচন।
ইসরায়েলি লেবার পার্টি ও বিরোধী দলীয় সাংসদ মিরাভ মিখাইলি বলেছেন, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন নেতানিয়াহুর সরকারের স্থলাভিষিক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ সময় তিনি এই সরকারকে বিশেষভাবে বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক বলে উল্লেখ করেছেন। গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা এবং সব জিম্মিকে ফেরত আনা জরুরি হয়ে পড়েছে বলেও জানান তিনি। সবশেষে ইসরায়েলকে আবারও পুনর্গঠন করার তাগিদ দেন এই নেতা।
এদিকে নেতানিয়াহু এখন তার সরকার বাঁচাতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন। তিনি তার জোট দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছেন। তবে ভোটটি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হতে পারে। আর এই ভোট নেতানিয়াহুর বিপক্ষে গেলেও, আগাম নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় চারটি ধাপের এটি প্রথম ধাপ মাত্র।
রয়টার্স বলছে, নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন শাসক জোট তাদের চলমান সবচেয়ে তীব্র রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে আরও সময় পেতে পারে। শেষ মুহূর্তে সংসদীয় ভোট স্থগিত হলে তারা অন্তত আপাতত একটি আগাম নির্বাচন এড়াতে সক্ষম হবে। যদি আগাম নির্বাচন হয়, তাহলে এটি হবে হামাসের সঙ্গে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের প্রথম নির্বাচন।