সুনামগঞ্জের পর্যটন এলাকা টাংগুয়ার হাওর, যাদুকাটা নদী, শহীদ সিরাজ লেক ও আশপাশের স্পটগুলোতে ছয় শতাধিক বিলাসবহুল হাউজবোট চলাচল করলেও এসব থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। অথচ দেশের অন্যান্য পর্যটন এলাকাগুলোতে একই ধরনের হাউজবোট বা নৌযান থেকে নিয়মিত রাজস্ব আদায় করে কোষাগারে জমা দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, মধ্যনগর, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলায় এসব হাউজবোটের অবস্থান। এর মধ্যে তিন শতাধিক হাউজবোটের নিবন্ধন রয়েছে তাহিরপুর উপজেলায়, বাকিগুলো জেলা সদরসহ আশপাশে।
এই হাউজবোটগুলো আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন, এসি, খাবার, বিনোদনসহ সকল আয়োজন থাকে। প্যাকেজভিত্তিক প্রতি পর্যটকের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকার বেশি আদায় করা হয়। একটি ট্রিপে ৩০–৪০ জন পর্যটক নেওয়া হয়, ফলে এক রাত-দুই দিনের ভ্রমণে একটি হাউজবোটে আয় হয় লাখ টাকারও বেশি।
তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় বাসিন্দা ও হাউজবোট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৯ সালে টাংগুয়ার হাওরে পর্যটক এসেছিল প্রায় ২ লাখ।
এরপর ২০২০ সালে করোনা মহামারিতে কমে গেলেও ২০২১ সালে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ, ২০২২ সালে ৫ লাখ, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ লাখ এবং ২০২৪ সালে আরও বেশি পর্যটক এসেছেন। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্তও লাখ লাখ পর্যটক এই হাওর ও আশপাশের স্পটগুলো ভ্রমণ করেছেন।
তবে এসব হাউজবোটের একটি বড় অংশ কোনো ধরনের সরকারি নিয়ন্ত্রণ বা অনুমোদন ছাড়াই চলাচল করছে। সংরক্ষিত এলাকা টাংগুয়ার হাওরেও নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রবেশ করছে এসব নৌযান।
এতে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও প্রতিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। প্রশাসনের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না অনেক হাউজবোট মালিক ও পর্যটক।
সচেতন মহল বলছে, সরকারকে রাজস্ব দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও হাউজবোট মালিক ও সংশ্লিষ্ট ট্রাভেল এজেন্সিগুলো তা মানছে না। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি ও কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম জানান, বর্তমানে নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত কোনো হাউজবোট থেকে রাজস্ব নেওয়া হচ্ছে না।
তবে রাজস্ব আদায়ের নিয়ম রয়েছে এবং এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।