1. admin@sylhetbela24.com : admin :
July 15, 2025, 6:38 pm
বিজ্ঞপ্তিঃ
সিলেট বেলা ২৪ ডটকম এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম! আপনার আশে পাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ আমাদেরকে জানাতে sylhetbela247@gmail.com এ পাঠিয়ে দিন। আমরা যাচাই বাছাই শেষে তা যথারীতি প্রকাশ করবো। আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

শুভ দোল পূর্ণিমা :অশুভের বিরুদ্ধে শুভশক্তির জয়

  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৩, ২০২৫
  • 67 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

প্রণব চক্রবর্তী :

দোলযাত্রা দোল পূর্ণিমা নামেও পরিচিত। এটি গ্রামীণ বঙ্গাব্দের শেষ উৎসব। মানুষ বসন্ত ঋতুকে শুভ আহ্বান করে এ অনুষ্ঠান উদযাপন করে। দোল ও হোলি একই উৎসব হলেও এগুলো বিভিন্ন সনাতনী পৌরাণিক কাহিনির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। দোল শুধু ফুর্তির উৎসব নয়। এটি অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির বিজয় নিশ্চিত করার জন্য সনাতনী সখ্যকে গুরুত্ব আরোপ করে। দোল শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধার ওপর কেন্দ্রীভূত। আবার হোলি দেবতা বিষ্ণুর উত্তর ভারতীয় অবতার প্রহ্লাদের কাহিনির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। বৃন্দাবনে দোল শুরু হয় বাংলা পঞ্জিকার ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমার পরের দিন।

অনধ্যায়

এ বছর ১৩ মার্চ, বৃহস্পতিবার দিবা ১০টা ৫৩ মিনিট থেকে শুক্রবার দিবা ১২টা ৫ মিনিট পর্যন্ত দোলপূর্ণিমা। এদিনটি অনধ্যায়ভুক্ত। অর্থাৎ এদিন লেখাপড়ায় শাস্ত্রীয় বিরতি। অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্র ছাড়া এদিন অর্থাৎ শুক্রবার ছাত্রছাত্রীদের ছুটি।

রঙের দিন

কথিত আছে যে, দোলের দিনেই শ্রীকৃষ্ণ প্রথম শ্রীরাধাকে কতটা ভালোবাসেন তা দেখিয়েছিলেন, যখন শ্রীরাধা তার ‘সখীদের’ সঙ্গে দোলনায় খেলা করছিলেন। ‘ফাগ’, যা গুলালের মতো একটি গুঁড়ো রং, তা তার মুখে ছুড়ে দিয়েছিলেন। দোলের আক্ষরিক অর্থ ‘দোল’। রং লাগানোর পর সখীরা পালকিতে করে দম্পতিকে ঘুরিয়ে পবিত্র নৈকট্য উদযাপন করেন। ঐতিহ্যবাহী বাঙালি দোলযাত্রায় আজও শুকনো রং ব্যবহার করে পরিবেশিত হয়।

সনাতনীদের মধ্যে রাধা বল্লভ ও হরিদাসী সম্প্রদায়ের আয়োজনে রাধা কৃষ্ণের বিগ্রহ পূজা করা হয় এবং উদযাপন শুরু করার জন্য রং ও ফুল দেওয়া হয়। উৎসবটি সনাতনী ধর্মচারীরা অত্যন্ত আবেগ ও ভক্তির সঙ্গে পালন করেন।

গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতধারায় এ অনুষ্ঠানটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ কারণ হলো—এটি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মকে চিহ্নিত করে, যাকে রাধা ও কৃষ্ণের যৌথ অবতার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শ্রীচৈতন্য শুধু অবতার ছিলেন না; একজন বিখ্যাত দার্শনিক ও সন্ত ছিলেন। তিনি ভারতে ভক্তি আন্দোলনের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের ঐতিহ্যও প্রতিষ্ঠা করেন সনাতনীদের মাঝে শ্রীচৈতন্য।

এই শুভ দিনে শ্রীকৃষ্ণ ও তার প্রিয় শ্রীরাধার বিগ্রহ/প্রতিমাগুলো রঙিন পাউডার দিয়ে মোড়ানো ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাজানো হয়। রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ রঙিন কাগজ, ফুল এবং পাতা দিয়ে সজ্জিত দোলনশীল পালকিতে করে ভারতের ব্রজ, রাজস্থান, গুজরাট, বাংলা, ওড়িশা ও আসাম রাজ্যজুড়ে শোভাযাত্রা করা হয়। শঙ্খধ্বনি, তূরী বাজানো, বিজয় বা আনন্দের ধ্বনি এবং ‘হোরি বোলা’-এর শব্দে শোভাযাত্রা এগিয়ে যায়।

এদিনেই চন্দ্রগ্রহণ

চলতি বছরে হোলির দিনে আরও পড়েছে চন্দ্রগ্রহণ। সময় অনুসারে, বাংলাদেশ থেকে এ গ্রহণ দেখা যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে জ্যোতিষমতে, এ চন্দ্রগ্রহণের কোনো প্রভাবই পড়বে না আমাদের দেশে। গ্রহণের সময় শুরু হবে ১৪ মার্চ, শুক্রবার বেলা ১১টা ৯ মিনিট থেকে। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ শেষ হবে বেলা ৩টা ১৮ মিনিটে।

অসুর রাজা হিরণ্যকশিপু

ভাগবত পুরাণের সপ্তম অধ্যায় অনুসারে, অসুর রাজা হিরণ্যকশিপু অমরত্বের জন্য কঠোর ধ্যানে নিমগ্ন হন। এতে তিনি যে বর লাভ করেন, তাতে তিনি পাঁচটি বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হন। এগুলো হচ্ছে, তাকে মানুষ কিংবা প্রাণী কেউই হত্যা করতে পারবে না। তাকে ঘরেও হত্যা করা যাবে না আবার বাইরেও হত্যা করা যাবে না। তাকে দিনেও হত্যা করা যাবে না আবার রাতেও হত্যা করা যাবে না। তাকে অস্ত্রের দ্বারাও হত্যা করা যাবে না আবার শস্ত্রের দ্বারাও হত্যা করা যাবে না। স্থল, জল বা বায়ু কোথাও তাকে হত্যা করা যাবে না। এই বর লাভ করে হিরণ্যকশিপু অহংকারী ও উদ্ধত হয়ে ওঠেন।

তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, শুধু তাকেই দেবতা হিসেবে সবাই পূজা করবে। তার পুত্র প্রহ্লাদ তার সঙ্গে একমত হলেন না। পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন বিষ্ণুভক্ত। তার পিতাকে দেবতা হিসেবে পূজা করতে তাই তিনি অস্বীকার করেন এবং বিষ্ণুকেই পূজা করা চালিয়ে যান।

এতে হিরণ্যকশিপু খুব রাগান্বিত হন। প্রহ্লাদকে হত্যা করার বিভিন্ন চেষ্টা করেন। এজন্য একবার হিরণ্যকশিপু তার বোন হোলিকার সাহায্য চান। হোলিকার একটি বিশেষ পোশাক ছিল, যা তাকে আগুনে পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করত। হোলিকার কোলে বসে হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদের ওপর আগুন জ্বালিয়ে দেন। ভেবেছিলেন, এতে প্রহ্লাদ আগুনে পুড়ে মারা যাবে; কিন্তু হোলিকার কাছে থাকা বিশেষ বস্ত্রের জন্য হোলিকার ক্ষতি হবে না। কিন্তু আগুন জ্বলতেই হোলিকার শরীর থেকে বস্ত্র খুলে গিয়ে প্রহ্লাদের শরীরকে আবৃত করে। এতে হোলিকা আগুনে পুড়ে যায়, কিন্তু প্রহ্লাদ ক্ষতি থেকে বেঁচে যায়।

বিষ্ণু নৃসিংহ অবতার রূপে গোধূলি লগ্নে আবির্ভূত হন। হিরণ্যকশিপুকে ঘরের চৌকাঠে (না বাইরে না ঘরে) নিয়ে যান। তাকে নিজের কোলে (না বায়ুতে, না স্থলে) স্থাপন করেন। এরপর হিরণ্যকশিপুর নাড়িভুঁড়ি বের করে এবং থাবা দিয়ে (না অস্ত্র না সস্ত্র) তাকে হত্যা করেন। এভাবে হিরণ্যকশিপুর লাভ করা বর তাকে বাঁচাতে পারেনি। ফলে প্রহ্লাদ ও মানবজাতি বাধ্যবাধকতা ও ভয় থেকে মুক্তি পায়। নৃসিংহের দ্বারা হিরণ্যকশিপু বধের এ কাহিনি অশুভের ওপর শুভের জয়কে নির্দেশ করে। হোলিকা দহন বা ন্যাড়াপোড়া উৎসব এ ঘটনাটিকেই নির্দেশ করে। হোলিকার এ অগ্নিদগ্ধ হওয়ার কাহিনিই দোলের পূর্বদিনে অনুষ্ঠিত হোলিকাদহন বা চাঁচর উৎসবের সঙ্গে যুক্ত। অশুভ শক্তিকে পরাভূত করে শুভ শক্তির বিজয়ের উৎসবও তাই দোলপূর্ণিমা।

দোলের বিভিন্ন রঙের মাহাত্ম্য

নীল রং দিয়ে দোল খেললে শনিদেবের কৃপা লাভ করবেন। সবুজ রং সমৃদ্ধি ও ইতিবাচক শক্তির প্রতীক। এই রং দিয়ে দোল খেললে কারও সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি থাকলে তা কেটে যায়। ব্য়বসায়ী, শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের সবুজ রং দিয়ে দোল খেলা ভালো। পার্পল রং আত্মবিশ্বাস ও সমতার প্রতীক। হীনম্মন্যতা থেকে মুক্তি পেতে এই রং দিয়ে দোল খেলা ভালো। গোলাপি রং মনের শক্তি বাড়ায়। এই রং প্রেম গাঢ় করতেও সাহায্য করে। লাল রং দিয়ে দোল খেললে মঙ্গলের কৃপা পাওয়া যায়। হলুদ রং হলো শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়। আনন্দ ও জ্ঞানের প্রতীক এই রং। সৌন্দর্য ও আধ্যাত্মিকতার দিক দিয়েও হলুদ রং শুভ। প্রেমিক-প্রেমিকারা ও যারা সোনা-রুপার ব্যবসা করেন, তারা এই রং দিয়ে দোল খেলতে পারেন। কমলা রং শক্তি ও জ্ঞানের প্রতীক। এই রং মনের শক্তি, প্রেম ও সুখ বাড়ায়।

লেখক: ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কমিটির উপদেষ্টা পুরোহিত; সম্পাদক জয় বাবা লোকনাথ পঞ্জিকা এবং অতিরিক্ত সচিব (অব.)

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2024 Sylhetbela24.com
Theme Customized By BreakingNews