1. admin@sylhetbela24.com : admin :
June 22, 2025, 10:22 am
বিজ্ঞপ্তিঃ
সিলেট বেলা ২৪ ডটকম এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম! আপনার আশে পাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ আমাদেরকে জানাতে sylhetbela247@gmail.com এ পাঠিয়ে দিন। আমরা যাচাই বাছাই শেষে তা যথারীতি প্রকাশ করবো। আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

আজ সেই ১৩ মার্চ : শহীদ রাজু- লাল সালাম

  • প্রকাশিতঃ শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫
  • 64 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

বেলা প্রতিবেদন :

“এই রাজুতে আয়…” রাজু ভাস্কর্যের এই রাজু কে? এখনকার প্রজন্ম কি জানে? তারা কি তার রাজনৈতিক আদর্শ জানে? কীভাবে খুন হয়েছিল রাজু? আজ ১৩ মার্চ, রাজুর শহীদ হবার দিন।

মঈন হোসেন রাজুর জন্ম বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে। তবে তাঁর পরিবার প্রথমে চট্টগ্রাম এবং পরে ঢাকায় বসবাস শুরু করে। ঢাকায় থাকার সময় তিনি স্কুলজীবনেই যুক্ত হন ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে। ১৯৮৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। তিনি নব্বইয়ের স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯১ সালে ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

ওই সময়ে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্রসংগঠনগুলো প্রায়ই অস্ত্রের মহড়া দিতো। সেদিন, ১৩ মার্চ ১৯৯২, ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ বিবাদে জড়ায়। তার আগে ছাত্র শিবিরের সাথেও দ্বন্দ্ব হয়। আজকের মতো তখনও রমজান মাস চলছিলো। তো, ওদিন ডাস ক্যাফেটেরিয়ায় ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের অস্ত্রধারীরা বচসা শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যে ছাত্রদল হাকিম চত্বরের দিকে আর ছাত্রলীগ শামসুন নাহার হলের দিকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে সরে যেতে থাকল। এ ঘটনা যখন চলছিল, তখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি–সংলগ্ন ফটকে অবস্থান করছিল পুলিশ। একপর্যায়ে টিএসসিতে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। মুহূর্তেই ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় টিএসসি।

রাজু ও তার সহযোদ্ধারা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন পুলিশ জানায় তারা বিষয়টা দেখবে। রাজু পুলিশ কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কী দেখছেন তা তো আমরা সবাই দেখলাম। আপনার দুই পাশে থাকা সন্ত্রাসীদের কি চোখে পড়ছে না?’ পুলিশ কর্মকর্তা রাজুর দিকে আঙুল তুলে অন্য পুলিশদের আদেশ করতে থাকেন, ‘এই ছেলেকে ধর।’ রাজু উত্তেজিত হয়ে নিজের বুকের শার্টে হাত ধরে বলেন, ‘ধর আমাকে’।

মাহমুদ নামের এক বন্ধু রাজুকে টেনে নিয়ে আসেন টিএসসির ঠিক মাঝখানটায়। রাজু তখন রহিমের (তাঁদের সহপাঠী) দিকে আঙুল তুলে আদেশ করলেন, ‘স্লোগান ধর রহিম।’ রহিম জিজ্ঞেস করলেন কোন সংগঠনের ব্যানারে মিছিলটা হবে। রাজু বললেন গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের নামে স্লোগান দিতে।

তাঁদের ১০-১২ জনের মিছিলটি টিএসসির পূর্ব গেট ধরে ডাস (ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্ন্যাকস) ঘুরে হাকিম চত্বরের পাশ দিয়ে বর্তমান রাজু ভাস্কর্য ঘুরে টিএসসিতে অবস্থান নেয়। তখন মিছিল বিশাল আকার ধারণ করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসে যোগ দিয়েছে। এরপর আবার ঘুরে টিএসসির পশ্চিম দিকের সিঁড়িঘরের সামনে মিছিলটি থামে। নেতা-কর্মীরা সমাপনী বক্তব্য দিতে থাকেন।

ঠিক সেই মুহূর্তে আবার গোলাগুলি শুরু হয়। রাজু ও মিছিলের সঙ্গীরা সিদ্ধান্ত নেন সাহসী প্রতিবাদের। এগিয়ে যান আবারও একই পথে। স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্য অতিক্রম করে কিছু দূর যাওয়ার পর এক রাউন্ড গুলি হয়। রাজু চিৎকার করে মাহমুদকে বলে ওঠেন, ‘ওরা মিছিলের ওপর গুলি করেছে।’ পরমুহূর্তে আরেক রাউন্ড গুলি। রাজু তাঁকে টান দিলেন। মাহমুদ ভাবলেন, রাজু শুয়ে পড়ার জন্য তাঁকে টানছেন। মাহমুদ হাঁটু গেড়ে বসতেই রাজু হেলে পড়লেন মাহমুদের কাঁধে। তাঁর চোখ জোড়া তখন উল্টে গেছে। মাহমুদ রাজুকে জড়িয়ে ধরে দেখলেন রাজুর হাত বেয়ে রক্ত ঝরছে। রাজু গুলিবিদ্ধ। পাশেই ছিল পুলিশ। সাহায্য চাইলেন মাহমুদ। পুলিশ উল্টো দিকে দৌড় দিল। গিয়ে তাঁদের দিকেই টিয়ার শেল ছুড়ল।

মিনিট পাঁচেক কেটে গেল। ধোঁয়া আর অন্ধকারের মধ্যেই মাহমুদ দেখতে পেলেন, ডাসের দিক থেকে দুজন এগিয়ে আসছেন। রাজুকে তাঁরা কোলে করে রিকশায় তুলে নিলেন। গুলিবিদ্ধ রাজুকে নিয়ে ছুটলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রাজু আর ফেরেনি। সেদিন বাসায় যেয়ে ভাত খাবে বলে মাকে কথা দিয়েছিলো। মায়ের অপেক্ষা শেষ হলো না আর।

রাজুকে গুলি করেছিলো ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা। এটা মামলা করেছিলেন তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। কিন্তু আজও সে হত্যার বিচার হয়নি।

প্রকৃতির প্রতি রাজুর ছিল অগাধ ভালোবাসা। রাজুর প্রিয় কবি ছিল জীবনান্দ দাস। গুলিবিদ্ধ হবার সময় ওর কাঁধে যে ব্যাগ ছিল তার ভেতরে ক্লাস নোটের খাতায় জীবনান্দ দাসের অনেক কবিতা লেখা ছিল নিজের হাতে। তারই একটি কবিতা “মনে হয় একদিন আকাশের শুকতারা দেখিব না আর/…… দিন যায় কেটে যায়/ শুকতারা নিভে গেলে কাঁদে কি আকাশ?” কবি শামসুর রাহমান শহীদ মঈন হোসেন রাজুকে নিয়ে লিখেছিল কবিতা “পুরানের পাখি”। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির বিবৃতি “রাজু হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করলো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনযাপন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ”। “রাজু ছিল বর্বর আগ্নেয়াত্রের প্রতিপক্ষ”, বলেছিলেন হুমায়ন আজাদ। হুমায়ুন আহমেদ এই খবর শুনে সারারাত ঘুমুতে পারলেন না। শহীদুল্লাহ হলের প্রভোস্ট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের শোকবাণী দিয়েছিল। শহীদ রাজু মৃত্যুর কয়েক দিন পূর্বে তার রুমে লাগিয়ে ছিল লেনিনের একটি পোষ্টার। তাতে লেখা “এখন ভেঙ্গে পড়বার সময় নয়, জ্বলে উঠবার সময়, কোনো মৃত্যুই যেন বিনা বদলায় না যায়”- যেন রাজুর শেষ বাণী।
সেই রাজুর স্মরণে টিএসসিতে ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে নির্মিত হয় রাজু ভাস্কর্য। রাজু সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ের প্রতীক। তাই ওই ভাস্কর্যটির মূল নাম ‘সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্য’।
শহীদ রাজু- লাল সালাম।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2024 Sylhetbela24.com
Theme Customized By BreakingNews