পাকিস্তানের কারাকোরাম পর্বতমালার লাইলা পিকে পর্বতারোহণকালে পাথরধসে নিহত হন জার্মান অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী বায়াথলিট লরা ডালমেয়ার। তবে দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের কারণে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী উদ্ধার অভিযান স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিব আহমেদ মুখতার বুধবার (৩০ জুলাই) নিশ্চিত করেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,৭০০ মিটার (১৮,৭০০ ফুট) উচ্চতায় পর্বতারোহণকালে পাথরধসে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৩০ বছর বয়সী ডালমেয়ার।
এক বিবৃতিতে বৃহস্পতিবার ডালমেয়ারের ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানায়, স্থানটি ‘অত্যন্ত দুর্গম’ হওয়ায় উদ্ধার অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি।
পাকিস্তান আলপাইন ক্লাবের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, পরিস্থিতির উন্নতি হলে ভবিষ্যতে আবার উদ্ধারের কথা ভাবা হতে পারে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জীবিত অবস্থায় ডালমেয়ার তার সহকর্মীদের জানিয়েছিলেন, যদি তার মৃত্যুর পর উদ্ধার প্রচেষ্টা কারো জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তাহলে তিনি চান না কেউ সে চেষ্টা করুক।
উদ্ধারকারীদের একটি দলে থাকা জার্মান পর্বতারোহী থমাস হুবার বলেন, ‘ওর ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি—ওকে ওখানেই রেখে দেওয়া হোক।’
উদ্ধারকারী দলের আরেক সদস্য, মার্কিন পর্বতারোহী জ্যাকসন মারভেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘লরার মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হলেও তা চূড়ান্ত ঝুঁকিপূর্ণ, হেলিকপ্টার দিয়ে হোক কিংবা পায়ে হেঁটে।
তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে মরদেহ সরানোটা হবে অসম্মানজনক।’
লরার সঙ্গে থাকা পর্বতারোহী মারিনা ক্রাউস সংবাদ সম্মেলনে জানান, দুর্ঘটনার মুহূর্তে তিনি নিজ চোখে দেখেন কীভাবে পাথরের আঘাতে লরা দেয়ালে আছড়ে পড়েন।
ক্রাউস বলেন, ‘আমি ওকে ডাকছিলাম, কিন্তু কোনো সাড়া দিচ্ছিল না। আমি বুঝতে পারছিলাম, কেবল হেলিকপ্টারের মাধ্যমে সাহায্য পৌঁছাতে পারলে কিছু করা যেত।
আমি ওর কাছে যেতেও পারিনি, পরিবেশটা ছিল অসম্ভব ঝুঁকিপূর্ণ।’
উল্লেখ্য, লরা ডালমেয়ার ছিলেন জার্মানির বিখ্যাত বায়াথলিট। ২০১৮ সালের পিয়ংচ্যাং শীতকালীন অলিম্পিকে একই আসরে স্প্রিন্ট ও পারসুইট ইভেন্টে স্বর্ণপদক জিতে ইতিহাস গড়েছিলেন তিনি। এছাড়াও তার ঝুলিতে রয়েছে সাতটি বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ স্বর্ণপদক।
মাত্র ২৫ বছর বয়সে, ২০১৯ সালে তিনি পেশাদার ক্রীড়াজীবনের ইতি টানেন।
অবসর নেয়ার পর তিনি জার্মান সম্প্রচার সংস্থা জেডডিএফ-এ ‘বায়াথলন ধারাভাষ্যকার’ এবং একজন প্রশিক্ষিত পর্বতারোহী ও গাইড হিসেবে কাজ করতেন।