1. admin@sylhetbela24.com : admin :
June 22, 2025, 2:25 am
বিজ্ঞপ্তিঃ
সিলেট বেলা ২৪ ডটকম এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম! আপনার আশে পাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ আমাদেরকে জানাতে sylhetbela247@gmail.com এ পাঠিয়ে দিন। আমরা যাচাই বাছাই শেষে তা যথারীতি প্রকাশ করবো। আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী প্রচারের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

লোকসংগীতের অমর ধারাশিল্পী সুষমা দাশ

  • প্রকাশিতঃ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০, ২০২৫
  • 53 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

মিহিরকান্তি চৌধুরী :

বাংলাদেশের লোকসংগীতের জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন শিল্পী সুষমা দাশ। তাঁর সুরেলা কণ্ঠস্বর, লোকসংগীতের প্রতি গভীর অনুরাগ, এবং সংগীত সাধনার মাধ্যমে তিনি বাংলা সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন। প্রাচীন লোকগানের জীবন্ত দলিল বলা চলে তাঁকে। একুশে পদক ও অন্য আরও সম্মানে ভূষিত এই বরেণ্য শিল্পী তাঁর সৃষ্টিশীলতা ও ঐতিহ্যের ধারক হয়ে আজও সংগীতপ্রেমীদের মনে অমর হয়ে আছেন।

১৯৩০ সালের ১ মে (বাংলা ১৩৩৬) সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার শাল্লা থানার পুটকা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সুষমা দাশ। তাঁর পিতা ছিলেন প্রখ্যাত লোককবি রসিকলাল দাশ এবং মাতা সংগীত রচয়িতা দিব্যময়ী দাশ। তাঁর ছোটোভাই পণ্ডিত রামকানাই দাশও ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ও সংগীতসাধক। পারিবারিক আবহেই তিনি সংগীতের প্রতি অনুরাগী হয়ে ওঠেন।

লোকগানের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকেই সুষমা দাশের সংগীতচর্চা শুরু হয়। লোকসংগীতের প্রতি তাঁর নিবেদন এতটাই গভীর ছিল যে, তিনি হাজার হাজার গান মুখস্থ করে রাখেন, যা কোনো কাগজ-কলমে লিপিবদ্ধ না থাকলেও মনের ডায়েরিতে গেঁথে ছিল। বাংলাদেশের বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন সংগীত পরিবেশন করেছেন এবং দেশে-বিদেশে লোকগানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

সুষমা দাশ মূলত পল্লীগীতি, কবিগান, হোরিগান, ঘাটুগান, ধামাইল, সূর্যব্রত, পালাগান, কীর্তন, বাউল, ভাটিয়ালী, পীর-মুর্শিদি ইত্যাদি গান গেয়ে থাকেন। সৈয়দ শাহনূর, শিতালং ফকির, দ্বীন ভবানন্দ, লালন সাঁই, আরকুম শাহ, হাসন রাজা, রাধারমণ, শাহ আবদুল করিমসহ বহু কিংবদন্তি লোককবিদের গান তিনি কণ্ঠে ধারণ করেছেন। অবাক করা বিষয় হলো, প্রায় দুই হাজারের অধিক লোকগান মুখস্থ সুষমা দাশের। কোনো বই বা পান্ডুলিপির সাহায্য ছাড়াই তিনি নব্বই বছরেরও অধিক বয়সে শুদ্ধ বাণীতে গান পরিবেশন করে তাকেন। তিনি নিজেও কয়েকটি গান লিখেছেন তবে সেগুলো সংখ্যায় কম।

২০২০ সালে আজিমুল রাজা চৌধুরী তাঁর সংগীত ও জীবনকথা নিয়ে “সুষমা দাশ ও প্রাচীন লোকগীতি” শীর্ষক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এতে তাঁর গাওয়া ২২৯টি প্রাচীন লোকগান সংকলিত হয়েছে।

সুষমা দাশ চার ছেলে ও দুই মেয়ের জননী। সুষমা দাশের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন:

  • কলকাতা ‘বাউল ফকির উৎসব’ সম্মাননা (১৪১৭ বাংলা)
  • জেলা শিল্পকলা একাডেমী গুণীজন সম্মাননা (২০১৫)
  • রাধারমণ উৎসব সংবর্ধনা (২০১৭)
  • রবীন্দ্র পদক (২০১৯)

বর্তমানে এই কিংবদন্তি শিল্পী বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন। তবুও সংগীতের প্রতি তাঁর টান আজও অটুট। লোকসংগীতের এই মহান সাধকের সুস্থতা কামনায় সংগীতপ্রেমীদের দোয়া, আশীর্বাদ ও ভালোবাসাই তাঁর প্রতি সর্বোৎকৃষ্ট সম্মান।
সুষমা দাশ শুধু একজন শিল্পী নন, তিনি বাংলা লোকসংগীতের এক জীবন্ত ইতিহাস। তাঁর গানের সুর ও বাণী যুগ যুগ ধরে সংগীতপ্রেমীদের মনে স্থান করে নেবে।

মিহিরকান্তি চৌধুরী : লেখক, অনুবাদক ও নির্বাহী প্রধান, টেগোর সেন্টার সিলেট।

শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© All rights reserved © 2024 Sylhetbela24.com
Theme Customized By BreakingNews