বেলা ডেস্ক :
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এবার ফেসবুকে একটি বিস্ফোরক পোস্ট দিলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ, যিনি শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং বর্তমানে নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে দেয়া ওই পোস্টটি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়, যেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, ভারতের তত্ত্বাবধানে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য একটি ষড়যন্ত্র চলছে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ তার পোস্টে উল্লেখ করেন, কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘১১ মার্চ বিকেল ২টা ৩০ মিনিটে ক্যান্টনমেন্ট থেকে আমিসহ আরও দুজনের কাছে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। আমাদের প্রস্তাব দেয়া হয় আসন সমঝতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদেরকে বলা হয়- ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা না-কি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন গত দুইদিন মিডিয়াতে আওয়ামীলীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে।’
হাসনাত আরও লেখেন, ‘আমাদেরকে আরও বলা হয়-যাদের দিয়ে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে। আমাদেরকে এই প্রস্তাব দেয়া হলে আমরা তাৎক্ষণিক এর বিরোধিতা করি এবং জানাই যে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করুন।
এর উত্তরে আমাদের বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোনো ধরনের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং ‘আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক’।’
এনসিপির এই সমন্বয়ক আরও লেখেন, “আলোচনার এক পর্যায়ে আমি জিজ্ঞাসা করি, যে দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই সেই দলকে আপনারা কিভাবে ক্ষমা করে দিবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম এন্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ‘ইনক্লুসিভ’ ইলেকশন হবে না।
উত্তরে আমি বলি, আওয়ামী লীগের সাথে কোনো ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। আওয়ামীলীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে ফেরাতে হবে। আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা করা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।”
হাসনাত আরও লিখেন, ‘জুলাই আন্দোলনের সময়ও আমাদের দিয়ে অনেক কিছু করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কখনো এজেন্সি, কখনো ক্যান্টনমেন্ট থেকে নানা ধরণের প্রেসক্রিপশন গ্রহণ করতে চাপ দেয়া হয়েছে। আমরা ওসব চাপে নত স্বীকার না করে আপনাদের তথা জনগণের উপরেই আস্থা রেখেছি। আপনাদের সাথে নিয়েই হাসিনার চূড়ান্ত পতন ঘটিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আজকেও ক্যান্টনমেন্টের চাপকে অস্বীকার করে আমি আবারও আপনাদের উপরেই ভরসা রাখতে চাই। এ পোস্ট দেয়ার পর আমার কী হবে আমি জানি না। নানামুখী চাপে আমাকে হয়তো পড়তে হবে হয়তো বিপদেও পড়তে হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোনো ধরনের আপোষ করার সুযোগ নাই।
হাসনাতের এই পোস্টের পরপরই প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। শুক্রবার ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র ক্যাম্পাসে মিছিল করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানায়। তারা শুক্রবার বিকেলে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আবারও জড়ো হয়ে তাদের দাবি জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছে।